হিমোগ্লোবিন কমে গেলে- আমাদের শরীরে রক্তের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান লোহিত রক্তকণিকা, আর লোহিত রক্তকণিকার প্রাণ হচ্ছে হিমোগ্লোবিন। এই হিমোগ্লোবিনের কাজ হলো ফুসফুস থেকে দেহকোষে অক্সিজেন পরিবহন করা।


আবার আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন অক্সিজেন। কোনো কারণে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বা পরিমাণ কমে গেলে সেই অবস্থাকে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা বলা হয়।

মানবদেহে বয়স ও লিঙ্গ অনুসারে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা ভিন্ন। সাধারণত জন্মের সময় নবজাতক শিশুর দেহে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ থাকে প্রতি লিটারে ২০০ গ্রাম।


পরবর্তীকালে তিন মাস বয়স থেকে তা কমতে থাকে এবং প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। পরে প্রাপ্ত বয়সের সময় হিমোগ্লোবিন আবার বাড়তে শুরু করে। পুরুষদের ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা প্রতি লিটারে ১৩০-১৮০ গ্রাম।

আর মহিলাদের ক্ষেত্রে ১১৫-১৬৫ গ্রাম। এ ক্ষেত্রে পুরুষ কিংবা মহিলা যেই হোক যদি কারো হিমোগ্লোবিনের মাত্রা প্রতি লিটারে ৭০ কিংবা ৮০ গ্রাম হয়ে যায় তবে সে ক্ষেত্রে মারাত্মক অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

তাই রক্তে যেন হিমোগ্লোবিনের মাত্রা না কমে সেদিকে সচেতন থাকা জরুরি। আমরা আজ একুশে টেলিভিশন অনলাইন পাঠকদের জন্য আলাপ করবো কোন কোন খাবার খেলে শরীরে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা বজায় থাকবে।


লৌহযুক্ত খাবার-

শরীরে লৌহের ঘাটতি হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে লোহা গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। লৌহসমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে মুরগির কলিজা, ঝিনুক, ডিম, আপেল, বেদানা, ডালিম, তরমুজ, কুমড়ার বিচি, খেজুর, জলপাই, কিশমিশ ইত্যাদি।

ভিটামিন সি-

ভিটামিন সি- এর অভাবে হিমোগ্লোবিন কমে যেতে পারে। তা ছাড়া ভিটামিন সি ছাড়া লোহা পুরোপুরিভাবে শোষণ হয় না। পেঁপে, কমলা, লেবু, স্ট্রবেরি, গোলমরিচ, সবুজ ফুলকপি (ব্রকোলি), আঙুর, টমেটো ইত্যাদিতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে।


ফলিক অ্যাসিড-

ফলিক অ্যাসিড একপ্রকার ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। এটি লাল রক্তকণিকা তৈরিতে প্রয়োজনীয় উপাদান। সবুজ পাতাযুক্ত সবজি, কলিজা, ভাত, শিমের বিচি, বাদাম, কলা, সবুজ ফুলকপিতে অনেক ফলিক অ্যাসিড পাওয়া যায়।

বিট-

হিমোগ্লোবিন বাড়াতে বিটের রস খাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তাররা। এতে রয়েছে প্রচুর আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ফাইবার ও পটাশিয়াম। এর পুষ্টিমান শরীরের লাল রক্তকণিকা বাড়ায়।

আপেল-

দিনে একটি করে আপেল খেয়ে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে পারেন। আয়রনের উৎস আপেলে আরও নানা প্রকার পুষ্টি উপাদান রয়েছে। প্রতিদিন খোসাসহ একটি আপেল খান। অথবা সমানুপাতে আপেল ও বিটের রস মেশাতে পারেন।

ডালিম-

আয়রন, ক্যালসিয়াম, শর্করা ও আঁশ (ফাইবার) সমৃদ্ধ ডালিম রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে দেহে রক্ত চলাচল সচল রাখে। প্রতিদিন মাঝারি আকৃতির একটি ডালিম খাওয়ার চেষ্টা করুন। ডালিমের জুস করেও খেতে পারেন।

দিন দিন কমে যাচ্ছে চেহারার উজ্জ্বলতা? জেনে নিন কী খাবেন, কী খাবেন না

ত্বকের অন্যান্য হাজার সমস্যা নিয়ে কথা বলা হয়। তার মাঝে একটি সাধারণ সমস্যা হলো ত্বকের অনুজ্জ্বলতা। মুখের ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যেতে পারে নানান কারণে। তার জন্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রকারের ত্বকের ফেসপ্যাক ও রূপচর্চার ব্যবহার। তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যায় ও নষ্ট হয়ে যায় অপুষ্টির কারণে। পুষ্টিকর ও প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান শরীর পায় না বলে ত্বক তার স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফেলে।

প্রথমত ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখার জন্য ও বৃদ্ধির জন্য প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন যুক্ত খাদ্য গ্রহণের প্রয়োজন। তার মাঝে ভিটামিন- বি, সি ও ই সবচেয়ে জরুরি। ভিটামিন বি২ প্রধানত ত্বকে উজ্জ্বলতা তৈরির কাজ করে থাকে।

ভিটামিন-বি২ যুক্ত খাদ্য হলো মাশরুম, দুধ, অন্যান্য দুগ্ধজাত খাদ্য, পালংশাক, ডিম ও গরুর মাংস। তবে দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য খাওয়ার সময় সতর্ক থাকা প্রয়োজন। কারণ বেশ কিছু গবেষণা থেকে দেখা গেছে, দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য থেকে ব্রণের উৎপত্তি দেখা দেয়।

ভিটামিন-সি’র কথা আসলে কমলালেবু, পেয়ারা ও স্ট্রবেরি খাওয়া যেতে পারে প্রচুর পরিমাণে। ভিটামিন-ই পাওয়া যাবে বিভিন্ন ধরণের বাদাম, মৌসুমি ফল এবং আবারও বিভিন্ন ধরণের শাক বিশেষ করে পালংশাকে। এছাড়াও কী কী খাদ্য উপাদানগুলো নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিৎ ও কী খাদ্য উপাদান গ্রহণ করা এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ সেটিও এখানে তুলে ধরা হলো।

যে খাদ্য উপাদানগুলো গ্রহণ করা প্রয়োজন

তাজা ফল ও সবজী

তাজা যে কোন ফল ও সবজীতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সমূহ এবং মিনারেল সমূহ। যে কারণে ফল বা সবজী খাওয়ার পরে শরীর অনেক স্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে। যার প্রভাব পড়ে চেহারার মাঝেও। মুখের ত্বক তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পায় বলে ত্বক অনেক উজ্জ্বল এবং স্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে। এতে করে ত্বক উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সবজী মাঝে যেকোন ধরণের শাক, টমেটো এবং ফলের মাঝে স্ট্রবেরি, আঙ্গুর, জাম্বুরা, কমলালেবু নিয়মিত গ্রহণ করার চেষ্টা করতে হবে।

তৈলাক্ত মাছ

ত্বকের উজ্জ্বলতা তৈরি করতে এবং সেটা ধরে রাখতে চাইতে মাছ খাওয়া কোনোভাবেই বাদ দেওয়া উচিৎ হবে না। কারণ, মাছ হলো একমাত্র প্রাকৃতিক খাদ্য উপাদান, যেটাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমূহ। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যেকোন ধরণের মাছ, বিশেষ করে তৈলাক্ত মাছ রাখার চেষ্টা করতে হবে।

পানি

একটি কথা জেনে রাখা জরুরি। যদি প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করা হয়ে থাকে তবে ত্বক একেবারেই অনুজ্জ্বল হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে অন্যান্য খাদ্য উপাদান গ্রহণ করলেও ফল পাওয়া যাবে না। নিয়মিত রূপচর্চা করলে কিংবা মেকআপ সামগ্রী ব্যবহারেও কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া সম্ভব হয়ে উঠবে না।

প্রতিদিন সকাল থেকে দিনের একদম শেষ পর্যন্ত আট গ্লাস পরিমাণ পানি পান করা আবশ্যক। এতে করে শরীর হাইড্রেটেড থাকবে এবং ত্বক তার প্রয়োজনীয় মিনারেল পাবে। যে কারণে শুধুমাত্র শারীরিক সুস্থতার জন্যেই নয়, চেহারায় উজ্জ্বলতা ধরে রাখার জন্যেও পরিমিত পানি পান করা প্রয়োজন।

যে খাদ্য উপাদানগুলো এড়িয়ে যাওয়া প্রয়োজন

ক্যাফেইন

বেশী পরিমাণে কফি গ্রহণের ফলে ত্বক ডিহাইড্রেটেড হয়ে ওঠে। যার ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। প্রতিদিন ছোট তিন কাপের বেশী কফি পান করা একেবারেই উচিৎ নয়। কফির পরিবর্তে গ্রিন টি পান করা যেতে পারে। গ্রিন টিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, যা শুকিয়ে যাওয়া কোষ পুনরায় উজ্জীবিত করে তুলতে সাহায্য করে।

কোমল পানীয়


কোমল পানীয় মূলত তৈরি হয় অতিরিক্ত পরিমাণে চিনি দিয়ে। ত্বকের জন্য চিনি খুবই ক্ষতিকর একটি উপাদান। চিনি শুধুমাত্র ত্বকের জন্যেই নয়, সুস্বাস্থ্যের জন্যেও হুমকি স্বরূপ একটি উপাদান। যে কারনে কোমল পানীয় পান করা থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকা উচিৎ। প্রয়োজনে কোন ফলের রস বা পানি পান করা যেতে পারে।

ফাস্ট ফুড

ফাস্ট ফুড ও প্রসেসড খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে তেল ব্যবহৃত হয়। এর সাথে আরো একটি উপাদান ব্যবহার করা হয়। সেটা হল টেস্টিং সল্ট। তৈরিকৃত খাদ্যের স্বাদ বৃদ্ধিতে এই উপাদানটি সকল ধরণের ফাস্ট ফুডে ব্যবহার করা হয়। তেল এবং টেস্টিং সল্ট- দুইটি উপাদানই শরীর ও ত্বকের জন্য খুব ক্ষতিকর। ত্বককে সুন্দর রাখার জন্যে অতিরিক্ত তেল জাতীয় খাদ্য এড়িয়ে চলা উচিৎ।


Leave a Reply