চলমান২৪:: অসুস্থ কৃষকের জমির ধান কেটে দিচ্ছেন শিক্ষক-স্কাউটের সদস্যরা। শুক্রবার মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পশ্চিম বেলাগাঁও এলাকায়। ছবি: কল্যাণ প্রসূন

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অসীম চন্দ্র বণিক ব্যক্তিগত উদ্যোগে শুক্রবার দুপুরে হাকালুকি হাওরে বোরো ধান কাটায় নিয়োজিত ৪০০ শ্রমিককে খাবার খাইয়েছেন। ধান কাটার কাজে শ্রমিকদের উৎসাহ জোগাতে তিনি এ উদ্যোগ নেন। একই দিনে জুড়ী মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্কাউটের সদস্যরা অসুস্থ এক কৃষকের এক বিঘা জমির ধান কেটে দেন।

শুক্রবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার সদর জায়ফরনগর ইউনিয়নের নয়াগ্রাম এলাকার পাশ ঘেঁষে হাকালুকি হাওরের বিস্তীর্ণ বোরো ধানের আবাদ। বেশির ভাগ জমির ধান পাকতে শুরু করেছে। বৃষ্টির মধ্যে শ্রমিকেরা ধান কাটছেন। কেউ কেউ ধানের আঁটি কাঁধে করে নিয়ে গন্তব্যে ছুটছেন। হাওরের প্রবেশপথে কয়েকজন যুবক ঠেলাগাড়িতে করে রান্না করা খাবার নিয়ে হাজির হন। তাঁরা শ্রমিকদের ডেকে ডেকে হাতে থালা ধরিয়ে তাতে খিচুড়ি ও ডিম তুলে দেন। শ্রমিকেরা কাঁচা রাস্তার দুই পাশে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে-বসে খাবার খান। এ সময় সেখানে ইউএনও, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ওমর ফারুক, জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাছুম রেজা, ইউপি সদস্য জমির আলী, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল ভূঁইয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।তাঁরা খাবার বিতরণ তদারক করেন।

ইউএনও অসীম চন্দ্র বণিক বলেন, ‘মূলত ধান কাটার কাজে শ্রমিকদের উদ্বুদ্ধ করতেই এ উদ্যোগ নিই। ৪০০ শ্রমিকের খাবারের ব্যবস্থা করেছি। সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের ত্রাণও দেওয়া হবে। শ্রমিকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।’

ইউএনও জানান, এবার হাওরে ধানের ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকেরা শঙ্কিত। অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢলে অতীতে কয়েক বার এ হাওরের ফসল নষ্ট হয়। এবার আগেভাগে ফসল ঘরে তুলতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে শ্রমিকসংকট মোকাবিলায় কর্মহীন লোকজনকে ধান কাটার কাজে নামতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এখন আর শ্রমিকসংকট নেই। এ মাসের মধ্যেই হাওরের সব ধান কৃষকদের ঘরে উঠে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

এলাকাবাসী জানান, জায়ফরনগর ইউনিয়নের পশ্চিম বেলাগাঁও গ্রামের কৃষক হোসেন মিয়া সম্প্রতি মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত রোগে অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাড়ির কাছে এক বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেন। ফসল পাকলেও কাটা নিয়ে উৎকণ্ঠায় ছিলেন। খবর পেয়ে জুড়ী মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের একদল শিক্ষক ও স্কাউটের সদস্যরা আজ (শুক্রবার) গিয়ে তাঁর জমির ধান কেটে বাড়িতে পৌঁছে দেন।

জুড়ী মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিতাংশু শেখর দাস বলেন, ‘স্থানীয় এক শিক্ষকের কাছ থেকে হোসেন মিয়ার কষ্টের কথা শুনে আমরা গিয়ে তাঁর ধান কেটে দিই। হোসেন মিয়ার মুখে হাসি দেখেই আমরা খুশি হয়ে গেছি।’