ভারতে মুসলিম যুবককে নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদ জানিয়েছেন হিন্দু যুবক অমিত দিত্তু (Amit Dittuu)। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছে তার সতীর্থরা। অনেকে আবার তার বক্তব্যকে সমর্থন্ও করেছেন। স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো…

“বছর পঁচিশের সদ্য বিবাহিত তবরেজ আনসারী পুনেতে কাজ করতো। ঈদের ছুটিতে জামশেদপুরে নিজের বাড়িতে এসেছিল বউ এবং পরিবারের সাথে আনন্দ করে কিছুটা সময় কাটাতে।

এই মঙ্গলবার তাকে এবং তার আরো দুই বন্ধুকে বাইক চোর সন্দেহ করে ঘিরে ফ্যালে তার বাড়ি থেকে প্রায় ৩৫কিলোমিটার দূরে, একটি অন্য গ্রামের মানুষরা। বাকি দু’জন পালিয়ে গেলেও, তবরেজকে ধরে ফ্যালে তারা। একটা সিমেন্টের পোলের সাথে বেঁধে ফ্যালা হয় তাকে। তারপর শুরু হয় প্রশ্ন করা…

– নাম কি?

– সোনু

– ভালো নাম কি?

– তবরেজ আনসারী…

ব্যাস, শুরু হয়ে যায় কাঠের ডান্ডা দিয়ে বেধড়ক মারধোর। যন্ত্রনায় কাতর হয়ে প্রাণ ভিক্ষা চাইতে শুরু করেন তবরেজ। কিন্তু নাহ! কোনো রেহাই তাকে দেওয়া হয়নি। সারাদিন, সারারাত তাকে পিটিয়ে গ্যাছে গ্রামের লোক। ‘জয় শ্রী রাম’ ‘জয় হনুমান’ বলতে বলা হয়েছে। সে বলেছে। তার পিঠে কাঠের লাঠি ভাঙতে ভাঙতে বলা হয়েছে, ‘আরো জোরে বল’। সে যন্ত্রনায় ভেঙে পড়তে পড়তে আরো জোরে তারস্বরে বলেছে ‘জয় শ্রী রাম….’

ভোরের দিকে লুটিয়ে পড়ে তবরেজ। গ্রামের লোকেরা বিপদ বুঝে, তাকে পুলিশ স্টেশনে পৌঁছে দিয়ে জানায়, বাইক থেকে পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছে সে। পুলিশ কাস্টাডিতে শরীরের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায় তার। শনিবার তাকে হসপিটালে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।

আমি জানিনা শ্রী রামের কাছে তার গলার আওয়াজ পৌঁছেছিল কিনা! আমি জানিনা শ্রী রাম ঠিক কতটা মুগ্ধ হন যখন একটা মুসলিম গলায় তার নাম ভেসে যায় বাতাসে! আমি জানিনা হিন্দুত্ববাদে ঠিক কোথায় লেখা আছে বিধর্মীদের জোর করে ‘জয় শ্রী রাম’ বলালে পুণ্য হয়!

আমি শুধু জানি এই হিংসা দেশ ছাড়াবে। আজ আমাদের দেশে মুসলিম সংখ্যালঘু, তাই এই অত্যাচার। কাল অন্য যেসব মুসলিম দেশে হিন্দুরা সংখ্যালঘু, সেখানে কিছু হিন্দুকে ঠিক একইভাবে মেরে ফ্যালা হবে। আবার কোনো মুসলিম জঙ্গি সংগঠন তাদের ‘কম’কে ‘আবাম’কে রক্ষা করতে হামলা করবে আপনার আমার বাড়িতে।

আমি মরবো, মরবে তবরেজ আনসারী। আমার দেহ নিয়ে দৌড়াবে একটা লাশগাড়ি নিমতলার দিকে। ধূপের গন্ধ, রাস্তা জুড়ে খই আর হরির নাম ছড়িয়ে দেবে আমার হিন্দু আত্মীয়রা। রাস্তায় মুসলমান তবরেজ ভাইয়ের জানাজার সাথে দেখা হয়ে যাবে আমার লাশগাড়ির।

তখন একে অপরের দিকে তাকিয়ে আমার আর তবরেজ ভাইয়ের আত্মীয়রা বুঝবে, চোখের জলের শালা কোনো ধর্ম হয়না….”

পূর্বপশ্চিমবিডি/এআর