কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীদের জন্য শুধু আল আজহার নয়, মিশরের বিশেষ বিশেষ জামেয়াগুলোতেও পড়ার সুব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন মিশর এম্বাসির রাষ্ট্রদূত ড. শিহাব মক্কি। ১৫ জুন “কওমি শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা” শীর্ষক সেমিনারে তিনি একথা জানান।
এতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আল আজহার, নদওয়াতুল উলামা, দারুল উলুম দেওবন্দের ফারেগিন ছুটে আসেন দারুল আরকামের মনোরম ক্যাম্পাসে। আরবি ও বাংলায় সমাজের বিশিষ্ট আলেমেদিন সেখানে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেন।
ড. শিহাব মক্কি আরও জানান, এতদিন ধরে ১২ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে আমরা বৃত্তি প্রদান করে এসেছি। আমরা এর সংখ্যা ৩০ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পাশাপাশি ছাত্রদের সুবিধার দিকে লক্ষ্য রেখে ভিসার মেয়াদ ১ মাস থেকে বৃদ্ধি করে ১ বছর করার ইচ্ছা পোষণ করেছি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের পরিচালক মাওলানা জুবায়ের আহমাদ চৌধুরী বলেন, আমাদের মাঝে অনেকেই দাওরা পড়েছেন, নাহু সরফে ভালো পারদর্শী কিন্তু আরবি বলতে পারে না। এই দুর্বলতা কাটানোর জন্য বিশেষ একটি মাধ্যম হতে পারে এরাবিক মিডিয়ার প্রতিষ্ঠান দারুল আরকাম আল ইসলামিয়া। যারা মিশরে যেতে আগ্রহী তারা এখান থেকে উপকৃত হতে পারবেন বলে আমরা আশাবাদী।
তিনি বলেন, যারা মিশরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বা যাবেন, তাদের প্রতি আকুল আবেদন থাকবে- তোমরা সেখানে গিয়ে আবার নিজেদের পরিচয় ভুলে যেও না। নিজেদের আকিদা ও বিশ্বাসের প্রতি অমনোযোগী হয়ো না। বেফাকের শীর্ষ আলেমগণ এজন্যই বহির্বিশ্বের পড়াশোনার বিষয়ে অনাগ্রহী। আশাকরি তোমরা নিজেদের পরিচয় ও আকিদা ভুলে যাবে না।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বেফাকের সহ সভাপতি ও দারুল আরকাম আল ইসলামির ( বি বাড়িয়া) পরিচালক আল্লামা সাজিদুর রহমান বলেন, মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে মাওলানা সানাউল্লাহর অবদান অনস্বীকার্য, তিনি মিশরে মাহাদুত – তিবয়ান করেছেন। যেখানে সারা বিশ্বের ছাত্ররা আরবি ভাষা শিখছে ও ইসলামিক শরিয়ার জ্ঞান অর্জন করছে। এরই ধারাবাহিকতায় উত্তরায় ও দারুল আরকাম এর সূচনা। আমি আশা করি, এই দারুল আরকাম আমাদের দারুল আরকামের উত্তম নমুনা হবে।
দারুল আরকাম আল ইসলামি আয়োজিত অনুষ্ঠানে মাওলানা কেফায়াতুল্লাহ আজহারি বলেন, ইলম অর্জনের জন্য বহির্বিশ্বে গমন একটি খুবই উপকারী পন্থা। ইমাম আজম আবু হানিফা, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম মালেক ও ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বালের ইলম অর্জনের জন্য দেশ-বিদেশ সফরের কথা আমরা সকলই জানি। তারা সকলই ইলম অর্জনে ছুটে গিয়েছেন পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে। ইলমের প্রতিটি শহরে তারা বিচরণ করেছেন। তাই আজ তারা এত বড় আলেম হতে পেরেছেন। সুতরাং তাদের মতো হতে চাইলে আমাদেরও ছুটে যেতে হবে পৃথিবীর আনাচে কানাচে।
সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন শায়েখ সানাউল্লাহ আজহারি। তিনি বলেন, কওমি শিক্ষার্থীরা যোগ্য আলেম। ইলমের নানান শাখায় তাদের বিচরণ রয়েছে। কিন্তু দেখা যায় কিতাবি যোগ্যতা থাকার পরও অনেকে আরবিতে কথা বলতে পারে না। বহির্বিশ্বে পড়াশোনার জন্য আরবিতে যোগ্য হওয়া অনিবার্য। তাই আমরা এই প্রতিষ্ঠানটির সূচনা করেছি। এখান থেকে ছাত্ররা যেন আজহারের জন্য যোগ্য হয়ে যেতে পারে।
দারুল আরকাম আল ইসলামির সাথে আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের মুআদালার প্রক্রিয়া অতিশীগ্রই সম্পূর্ণ হবে। আমরা খুব অল্প সময়ে এই মুআদালা করতে চেষ্টা করছি। আমাদের এখান থেকে সানাবিয়া উলয়া পড়ে ছাত্ররা সরাসরি আজহারে পড়তে পারবে। তাই মিশরে উচ্চশিক্ষা নিতে আগ্রহী ভাইদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলবো- আপনাদের চলার পথকে আরও সহজ করতে আমরা পাশে থাকবো।
পরিশেষে মাওলানা জোবায়ের আহমেদের মুনাজাতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। দোয়ায় তিনি মুসলিম বিশ্ব ও দেশের জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করেন। বিদেশে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী ছাত্রদের উত্তর উত্তর সফলতা কামনা করেন। সর্বোপরি দারুল আরকাম আল ইসলামির কবুলের দোয়া করেন।
এতে গরুত্বপূর্ণ আলোচনা পেশ করেন ড. কামাল আলহাজ সুদানী( সাবেক পরিচালক আল ফুজাইরা সংস্থা)। মাও. শাহেদ হারুণ আযহারী( শিক্ষক আন্তরজাতিক ইসলামী প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয়, গাজীপুর মাও. ড. আব্দুল মুকিত আযহারী প্রমূখ।
এটি-