চলমান২৪ঃ প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আব্রু-ইজ্জত হেফাজত ও সম্মান রক্ষার্থে, শাহবাগের নাস্তিক মুরতাদদের অবস্থানের বিরুদ্ধে, আমীরে হেফাজত শাইখুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফী (দা.বা)এর ডাকে, ক্বায়েদে মিল্লাত, হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী (হাফি.) উপস্থিতিতে, হেফাজতের নায়েবে আমীর, ফেদায়ে মিল্লাত, আপোষহীন নেতা আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (হাফি.) সভাপতিত্বে হেফাজতে ইসলামের ২০১৩ সালের আন্দোলন বাংলার তৌহিদী জনতা কখনো ভুলবে না!
একমাত্র বিশ্বনবী (সা.)এর সম্মান রক্ষার্থে শাইখুল ইসলামের ডাকে মাত্র কয়েক দিনের দাওয়াত ও মেহনতে বাংলাদেশের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা, গ্রাম-গঞ্জ, থানা-উপজেলা ও জেলা থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ, পুরো দেশ অবরুদ্ধ ও যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকা অবস্থায়ও মাইলের পর মাইল পথ পায়ে হেঁটে সেদিন শাপলা চত্বরে সমবেত হয়েছিল।
একদিকে আগত নবীপ্রেমী মুসলিম তৌহিদী জনতা যানবাহন ছাড়া পায়ে হেঁটে শাপলাচত্বরে এসেছেন, অপর দিকে না আছে কারো মুখে কোনো খাদ্যদ্রব্য, মনে হয়েছিল যেন সবাই বদর যুদ্ধের মতো রোজা মুখে নিয়েই নাস্তিক-মুরতাদদের বিরুদ্ধে শাপলার প্রান্তরে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।
সারাদিনের এই সমস্ত ক্লান্তি নিয়ে যখন শেষ রাতে কেউ জায়নামাজের বিছানায় দাঁড়িয়ে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ছিলেন, কেউ তাহাজ্জুদ নামাজ শেষ করে মহান প্রভুর দরবারে আলিশানে দু’হাত তুলে ফরিয়াদ করেছিলেন, কেউ আবার কোরআন তেলাওয়াত বা মহান আল্লাহর জিকিরে মগ্ন ছিলেন।
ঠিক এমন সময়ই তৎকালীন জালিম সরকারের নির্দেশে পুলিশ ও সরকারদলীয় হেলমেট ও লাঠিয়ালবাহিনী নেতা কর্মীদের যৌথ হামলায় ইতিহাসের এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড চালায়, যেই হত্যাকাণ্ডে শহীদ হয়ে জান্নাতের সার্টিফিকেট গ্রহন করেন হাজারো নবীপ্রেমিক তৌহিদী জনতা, যাদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে শাপলার ময়দান, ঢাকার পিচঢালা রাজপথ।
প্রিয় শায়খ, ফেদায়ে মিল্লাত, আপোষহীন নেতা আল্লামা নূর হোছাইন কাসেমী হাফিজাহুল্লাহ মাঝে মাঝেই সেই স্মৃতিচারণ করেন, আর তখন হুজুরের চোখে পানি টলমল করতে থাকে!
হুজুর বলেন, আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্তই সমাবেশস্থলে ছিলাম, অনেকেই অজু-ইন্তেঞ্জার জন্য সমাবেশ থেকে বের হতে বলেছিল, কিন্তু আমি বের হয়নি, এক অজুতেই সমস্ত নামাজ আদায় করেছিলাম, সারাদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ এসেছে এখানে, আর আমি তাদেরকে রেখে কোথাও যাবো না, শহীদ হতে হলে একসাথে সবাই শহীদ হবো, জেলে গেলে একসাথে সবাই জেলে যাবো! তবুও আমি কোথাও যাবো না!
৫ই মে’র সেই সমাবেশে আমীরে হেফাজত শাইখুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফী সমাবেশস্থলে এসে বক্তব্য ও দোয়ার মাধ্যমে সমাবেশ শেষ করার কথা ছিল, কিন্তু সেইদিন সমাবেশে আসতে থাকা তৌহিদী জনতার স্রোতের উপর বিনা উস্কানিতে নৃশংস হামলা চালায় এবং বিভিন্ন জায়গায় গাছ কেটে রাস্তায় ফেলে রাখা ও অগ্নিসংযোগ করার মাধ্যমে এক অরাজকতা সৃষ্টি করে ষড়যন্ত্রকারীরা।যার ফলে, আমীরে হেফাজত রওনা হয়েও আবার লালবাগ মাদরাসায় ফিরে যেতে বাধ্য হন।
হুজুর আক্ষেপ করে বলেন, সরকার আমাদেরকে মাত্র ২ ঘন্টা সময় দিলেই ফজরের পরে শাইখুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফী (দা.বা.) এর দোয়া’র মাধ্যমে আমাদের সমাবেশ সমাপ্তি ঘোষণা করা হতো! বাবুনগরী সাহেব বা আমি তো এই মহাসমাবেশ সমাপ্ত ঘোষণা করতে পারি না, একত হলো ডেকেছেন আল্লামা আহমদ শফী (দা.বা.) হুজুর, ২য়ত হলো হুজুর সমাবেশ স্থলে আসার কথা ছিল!কিন্তু সরকার মাত্র ২ ঘন্টা সময় দেয়নি র্যাব-পুলিশ, সরকারদলীয় লাঠিয়াল বাহিনীদের মাধ্যমে আমাদের এই শান্তিপূর্ণ ঈমানী আন্দোলনে বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নবীপ্রেমী নিরীহ মুসলিম তৌহিদি জনতার উপর ইতিহাসের এক নির্মম হত্যাকাণ্ড চালায় যাতে শহীদ হয় হাজারো তৌহিদী জনতা।
*শহীদের রক্ত কখনো বৃথা যাবেনা! যারা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন, আল্লাহ তা’আলা তাদের উত্তম প্রতিদান দান করবেন এবং তাদের ওসিলায় ইনশাআল্লাহ একদিন না একদিন বাংলার জমিনে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবেই হবে।
সর্বোপরি, বয়োবৃদ্ধ বয়সে আল্লামা নূর হোছাইন কাসেমী (হাফি.) এর সেদিনের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও হাজারো ত্যাগ ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকবে!
(সেদিন হুজুরের ভাষনের প্রতিটি শব্দ আলাদা আলাদা করে স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত!
১.””আমাদের ইতিহাস শাহাদাতের ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস শাহাদাতের ইতিহাস””
২.””আমরা অন্যায়ের সামনে মাথানত করি নাই, করব না””
৩.””উলামায়ে কেরাম সব সময়ই হক্ব-হক্কানিয়্যাতের জন্য কোরবানি দিয়েছে, শাহাদাত বরন করেছে, অন্যায়ের সামনে মাথানত করে নাই””)
আল্লাহ তাআলার হুজুরকে দীর্ঘ নেক হায়াত দান করুক!
আজও হুজুরের কাছ থেকে সেই কালো রাতের অনেক ইতিহাস শুনেছি, হুজুর বলা শুরু করলে বলতেই থাকেন, যেন শেষ হতেই চাই না! সব তুলে ধরার মত সাধ্য আমার কলমের নেই, আর এই জায়গাও তার কাবিল না! যতটুকু সম্ভব ততটুকুই তুলে ধরলাম!
শহীদের রূহের মাগফিরাতের জন্য দেশবাসীর প্রতি আল্লামা কাসেমীর বিশেষ দোয়ার আহ্বান!
মাহদী হাসান
বারিধারা, গুলশান, ঢাকা-১২১২