সিলেটে এই প্রথম চালু হচ্ছে নারীদের জন্য আলাদা বাস সার্ভিস। সুন্দরম এ বাসের যাত্রী, চালক, হেলপার সবাই থাকবেন নারী। চারটি রুটে মোট ৪ টি বাস চলাচল করবে প্রতিদিন। সিলেট সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবাবধানে নারীদের জন্য ‘নগর এক্সপ্রেস’ নামের বিশেষ এ বাস সার্ভিসের চালু করছে নিটল টাটা মটরস।
গাড়িতে নারীদের যৌন হয়রানী রোধ, কর্মক্ষেত্রে নারীদের সমতায়ন, চলাচলে নারীদের নিরাপদ যাত্রাসহ নানা বিষয় বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা দেশব্যাপী বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর নানা প্রকল্পকে আরো একধাপ এগিয়ে নিতে ‘নগর এক্সপ্রেস, নারী বাস’ প্রকল্পটি চালু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
নিটল টাটা সিলেট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, সিলেট নগরীতে গণপরিবহণের চাহিদা মিটাতে মোট ৪টি সড়কে ভাগ করে ‘নগর এক্সপ্রেস’ নাম দিয়ে ৪০ টি বাস চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে সিসিক। এই ৪০ টি বাসের ৩৬ টি সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করে নারী-পুরুষ সকলের জন্য উন্মুক্ত রাখা হলেও নারীদের জন্য আলাদাভাবে ৪ টি বাসের ব্যবস্থা রাখা হবে। এ বাসগুলোর রঙ হবে গোলাপি, চালক, হেলপার থাকবেন নারী। ভাড়া সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৫ টাকা থাকবে। প্রতিটি গাড়ির বডিতে লেখা থাকবে ‘শেখ হাসিনার দর্শন, সিলেটের উন্নয়ন।’
তারা জানান- ২৭টি সিটের বাসগুলোর একটি সড়ক ধরা হয়েছে টুকের বাজার থেকে বাগবাড়ী, মেডিকেল, বন্দর হয়ে সরাসরি হেতিমগঞ্জ, টুকেরবাজার থেকে আম্বরখানা, টিলাগড় হয়ে বটেশ্বর পর্যন্ত। অন্য দুটি ক্বীন ব্রিজ থেকে বন্দর, কদমতলী হয়ে রশীদপুর এবং এয়ারপোর্ট, জিন্দাবাজার, মোগলাবাজার হয়ে হাজিগঞ্জ পর্যন্ত মোট ৪ টি সড়কে ভাগ হয়ে ৩৬ টি গাড়ি প্রতি ১০ থেকে ১২ মিনিট পরপর চলাচল করবে।
নিটল টাটা সিলেট অফিসের বাস শাখার সমন্বয়কারী শাহ মোহাম্মদ বাহাদুর আলম জানান, নারীদের জন্য এসব বাসে চালক, হেলপার সবই থাকবেন নারী। নির্ধারিত বেতনের ভিত্তিতে তাদের নিয়োগ দেয়া হবে। ইতোমধ্যে চালক হেলপার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশন, মেট্রো আরটিসি, বিআরটিএ, ট্রাফিক বিভাগের সমন্বয়ে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শীঘ্রই বাসগুলো চালু করা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে নারীদের জন্য আলাদা বাস চালু করার বিষয়টিকে নারীদের ক্ষমতায়ন, কর্মক্ষেত্রে ও স্কুল কলেজে নারীদের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করার মতো একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন নারী মুক্তি সংসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা শাখার সভাপতি ইন্দ্রাণী সেন।
তিনি বলেন, আমরা যারা প্রগতিশীল চিন্তার অধিকারী, নারীদের সমঅধিকার ও নারীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে আন্দোলন করে আসছি তারা মনে করি সিলেটের মত একটি অঞ্চলে এ ধরণের একটি উদ্যোগ নিশ্চয় প্রশংসনীয়। কারণ বর্তমান সময়ে ধর্মান্ধ ও মৌলবাদী গোষ্ঠী নানাভাবে নারীদের যেরকম দমিয়ে রাখার অপচেষ্টায় লিপ্ত এরকম একটি সময়ে নারীদের সম্মানে আলাদা বাস সার্ভিস নারীদের ক্ষমতায়নে সহযোগী হবে। একই সাথে চলাচলে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও ভালো থাকবে বলে আমি মনে করছি।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সময়ে চলন্ত বাসে চালক-হেলপার কর্তৃক নারী ধর্ষণ, ধর্ষণের চেষ্টা এসব ঘটনা অহরহ ঘটছে। তাই গাড়ির চালক হেলপার মহিলা হওয়ায় একদিকে যেমন যাত্রী হিসেবে নারীরা নিরাপদ, তেমনি নারীদের কর্মক্ষেত্র তৈরিতেও এসব বাস সহায়ক হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এ উদ্যোগটি অত্যন্ত প্রশংসার দাবিদার উল্লেখ করে উইমেন্স চেম্বার সিলেটের সভাপতি স্বর্ণলতা রায় বলেন, নারীদের জন্য আলাদা বাস সার্ভিস চালু করার জন্য আমরা অনেক আগে মেয়র মহোদয়ের কাছে প্রস্তাবনা দিয়েছিলাম। কারণ আমরা যাই বলি না কেন আমাদের দেশে নারীদের জন্য এখনো পুরোপুরি নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। তাছাড়া সিএনজি চালকদের দৌরাত্ম্য, নারীদের নিরাপত্তাহীনতাসহ নানা কারণে এসব বাসের দাবি ছিলো। তাই এসব বাস চালুর বিষয়টি সিলেটের নারীদের জন্য একটি শুভ সংবাদ হিসেবে আমি মনে করছি।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, বাসগুলো নিটল টাটার কাছ থেকে নির্ধারিত মূল্যের বিনিময়ে কিনে আনা হবে। সকল কিছুর তত্ত্বাবধান করবে সিলেট সিটি করপোরেশন। বাসগুলো মেরামতসহ রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করবে নিটল টাটা কর্তৃপক্ষ। আপাতত বাসগুলো রাখার জন্য একটি জায়গা নির্ধারণ করে শীঘ্রই তা সড়কে নামানো হবে। সিসি ক্যামেরা, ওয়াইফাইসহ সবরকম সুবিধা ভোগ করে নারীরা যাতে নিরাপদে নারীরা চলাচল করতে পারেন, তার জন্য আলাদাভাবে বিশেষ বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশা করি এ উদ্যোগের মধ্যদিয়ে নারীদের সড়ক যাত্রা নিরাপদ হবে।