শহর ও গ্রামাঞ্চলে আড্ডা ও অবসর কাটানোর অন্যতম জনপ্রিয় স্থান চায়ের দোকান। এ কারণে দেশের চায়ের দোকানগুলোয় খদ্দেরের ভিড় থাকে সবসময়ই। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এ ধরনের ভিড় হয়ে উঠতে পারে বিপজ্জনক পরিস্থিতির কারণ। বর্তমানে প্রাণঘাতী কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব এড়াতে দেশের সর্বত্র সামাজিক দূরত্ব তৈরির নির্দেশনা থাকলেও এর লঙ্ঘন হচ্ছে চায়ের দোকানগুলোয়। এখনো সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভিড় থাকছে দেশের পাঁচ লাখ চায়ের দোকানে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের চায়ের দোকানগুলোয় এ ভিড়ের মাত্রা সবচেয়ে বেশি।
জানা গেছে, ২০০১ সালে মাথাপিছু চা ভোগের পরিমাণ ছিল ২৯৩ গ্রাম। ২০১৩ সালে তা উন্নীত হয়েছে ৩৭৯ গ্রামে। ২০১৭ সালেই তা ৫০০ গ্রাম ছাড়িয়ে যায়। মাথাপিছু চায়ের এ ভোগ বৃদ্ধির পেছনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে পাড়ার ও মোড়ের চায়ের দোকানগুলো। পাঁচ বছরে দেশে চায়ের দোকানের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২০ শতাংশ। আর এসব চায়ের দোকানে কর্মসংস্থান বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে দেশে চায়ের দোকান ছিল প্রায় ৪ লাখ ৯১ হাজার ২৭৯টি। ২০১৩ সালেও এর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ১১ হাজার ৩৩০। অর্থাৎ পাঁচ বছরের ব্যবধানে দেশে চায়ের দোকান বেড়েছে ৭৯ হাজার ৯৪৯টি বা প্রায় ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ। এসব চায়ের দোকানে কাজ করছেন প্রায় ১০ লাখ ৭৮ হাজার ব্যক্তি। ২০১৩ সালে এ সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ৮২ হাজার। এসব দোকানে পাঁচ বছরের ব্যবধানে কর্মসংস্থান বেড়েছে ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০১৩ সালে প্রতিটি চায়ের দোকানে গড়ে ২ দশমিক ১২ জনের কর্মসংস্থান ছিল। ২০১৮ সালের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ১৯ জনে।
আগামীকাল থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এ সময় দেশের বিপণিবিতান ও গণপরিবহন বন্ধের নির্দেশনা রয়েছে। পাশাপাশি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সব ধরনের বিনোদনকেন্দ্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সাধারণ মানুষকে ঘরে রাখার পাশাপাশি এ মুহূর্তে প্রয়োজনীয় সামাজিক দূরত্ব সৃষ্টির তাগিদেই এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এর পরও প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে চায়ের দোকানে ভিড় করছে সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলে এ নিয়ে সচেতনতাও বেশ কম।
এছাড়া গ্রামাঞ্চলে কভিড-১৯-এর সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন বিদেশফেরত প্রবাসীরা। গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছেন তারা। প্রতিনিয়তই আড্ডা জমাচ্ছেন চায়ের দোকানে।
এরই মধ্যে গণজমায়েত এড়ানোর বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। সংস্থাটির পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা গতকালও বলেছেন, এ সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা খুবই জরুরি। এখন সব ধরনের জমায়েত এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। তা না হলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে চায়ের দোকান। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মাগুরায়, ৭৬ শতাংশ। হারের দিক থেকে পরের অবস্থানে রয়েছে রংপুর। বিভাগীয় শহরটিতে পাঁচ বছরের ব্যবধানে চায়ের দোকান বেড়েছে ৭০ শতাংশ। এছাড়া ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বান্দরবানে ২৫ শতাংশ, জামালপুরে ৫০, কুড়িগ্রামে ২৯, শেরপুরে ৪৮, নেত্রকোনায় ৫০ ও কিশোরগঞ্জে ৩০ শতাংশ হারে চায়ের দোকান বেড়েছে। এর বাইরেও পঞ্চগড়ে ২৬ শতাংশ, বগুড়ায় ৩৯, ঝিনাইদহে ৪১, মানিকগঞ্জে ৩০, মেহেরপুরে ২৬, নীলফামারীতে ৫১, সিরাজগঞ্জে ২৫ ও কিশোরগঞ্জে প্রায় ৩০ শতাংশ হারে চায়ের দোকান বেড়েছে।