প্রথম দিন সংসদে এসে চলমান একাদশ সংসদকে ‘অনির্বাচিত’ বলে সংসদে উত্তাপ ছড়িয়েছেন বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য রুমিন ফারহানা।

মঙ্গলবার সংসদে একাদশ সংসদ নির্বাচন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জেল ও তারেক রহমানকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে রুমিন বারবার সরকারি দলের সদস্যদের বাধার মুখে পড়েন।

সরকারি দলের সদস্যরা তার বক্তব্যের প্রতিবাদ যেমন জানাচ্ছিলেন, তেমনি চিৎকার-চেঁচামেচিতে তাকে বাধাও দিচ্ছিলেন।

সংসদ সদস্য হিসেবে প্রথম দিন ‘শুভেচ্ছা বক্তব্য’ দিতে রুমিনকে দুই মিনিটের জন্য ফ্লোর দেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

প্রয়াত রাজনীতিক অলি আহাদের মেয়ে রুমিন বলেন, “সংসদে আজ আমার প্রথম দিন। যে কোনো রাজনীতিবিদের মতোই সংসদে আসা, সংসদে দেশের কথা, মানুষের কথা বলা আমার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমি এমন একটি সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছি যে সংসদটি জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়।”

এসময় আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্যরা হইচই শুরু করেন। এসময় স্পিকার কয়েকবার তাদের চুপ থাকতে বলেন।

রুমিন বলেন, “যদি আপনারা টিআইবির রিপোর্ট দেখেন, যদি আপনারা বিদেশি গণমাধ্যম দেখেন, যদি আপনারা বিদেশি পর্যবেক্ষকদের দেখেন, যদি আপনারা নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট দেখেন, আপনারা দেখবেন- এই সংসদটি জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। সুতরাং আমি খুশি হব যদি এই সংসদের মেয়াদ আর একদিনও না বাড়ে।”

তিনি বলেন, “আমি এমন একটি সংসদে আছি যে সংসদে তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, আপসহীন নেত্রী, গণতন্ত্রের জন্য যিনি বার বার কারাবরণ করেছেন- বাংলাদেশের গণমানুষের নেত্রী, যিনি জীবনে কোনোদিন কোনো আসন থেকেই পরাজিত হননি- বেগম খালেদা জিয়া, এই সংসদে নেই।

গত ৯ জুন সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন রুমিন ফারহানা“তাকে পরিকল্পিতভাবে উদ্দেশ্যপ্রণেদিত মিথ্যা মামলায় ১৬ মাসের অধিক সময় আটতে রাখা হয়েছে। একজন আইনজীবী হিসেবে আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, বেগম খালেদা জিয়ার মামলার মেরিট, তার শারীরিক অবস্থা, তার সামাজিক অবস্থান, এবং তার যে বয়স ও জেন্ডার সব কিছু বিবেচনায় তাৎক্ষণিক জামিন পাওয়ার যোগ্য। সরকারের হুমকিতে আমাদের অ্যাক্টিং চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারেন না।”

রুমিন বলেন, “আমাদের শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যন্ত একেকজন নেতার নামে শতশত মামলা। আমাদের মহাসচিব যিনি দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে একজন সজ্জন রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত….. ।”

দুই মিনিটের জন্য রুমিনকে মাইক দিয়েছিলেন স্পিকার; সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর মাইক স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

পরে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন রুমিনের বক্তব্য এক্সপাঞ্জের দাবি জানান।

সুজন বলেন, “মাননীয় সংসদ সদস্য লক্ষ্য করে ১৬ কোটি মানুষের প্রতি যে কটাক্ষ করেছেন। নির্বাচিত একটি সংসদকে অনির্বাচিত এবং অবৈধ বলেছেন। একদিকে উনি নিজে শপথ নিয়েছেন। অন্যদিকে বলছেন এই সংসদ অবৈধ এবং জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত নয়। আমি এই অংশটুকু এক্সপাঞ্জ করার জন্য প্রস্তাব রাখছি।”

পরে স্পিকার জানান কার্যপ্রণালি বিধির ৩০৭ বিধি অনুযায়ী সেই শব্দগুলি বাতিল করা হবে।

এর আগে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বিএনপির আরেক সদস্য হারুনুর রশীদ চাঁদ দেখা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি এবং সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’র বাংলা অর্থ সঠিকভাবে লেখা হয়নি বলে দাবি করেন।

এক পর্যায়ে তিনি ঈদের চাঁদ দেখা নিয়ে বিভ্রান্তির দায়ে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো: আবদুল্লাহর পদত্যাগও দাবি করেন। তার বক্তব্যের সময়ও সরকারি দলের সদস্যদের হইচই করতে দেখা যায়।

হারুন বলেন, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ এই কথাটিও ‘শরীয়ত পরিপন্থি’।

সূত্রঃ বিডিনিউজ২৪