আদালত চত্বরে আইনজীবীদের হাতে হেনস্তার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তানজিমা তাসকিন আদুরী নামে যুদ্ধাহত এক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। গত ৮ মে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে এ ঘটনা ঘটে। এখানেই শেষ নয়, ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা আদূরীকে ‘টাউট’ আখ্যা দিয়ে মামলা করে শাহবাগ থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। ‘মিথ্যা’ এ মামলায় ২১ দিন জেল খেটে বের হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু আদুরীর গর্ভের সন্তান আর বেঁচে নেই।

ভুক্তভোগী আদুরীর বাবার নাম আব্দুল জব্বার মন্ডল। বাড়ি রাজশাহীর জেলার বাগমারায়। বেসরকারি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি থেকে আইন বিষয়ে এলএলবি ও এলএলএম করেছেন তিনি।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, আপিল বিভাগে বিচারাধীন থাকা তার বাবার একটি জমিজমা বিরোধের মামলার জন্য সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন তিনি। এরপরই ওই ঘটনা ঘটে।
তিনি বলেন, বাবার আইনজীবী অ্যাডভোকেট হাই স্যারের সঙ্গে দেখা করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের সোনালী ব্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ দুইজন নারী আইনজীবী এসে আমাকে ‘টাউট’ আখ্যা দিয়ে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যায়। তাদেরকে বলেছি, আমি টাউট না। আমি বাবার মামলার জন্যই কোর্টে এসেছি। তারা আমার কোনো কথা শোনেনি। আমাকে ধরে নিয়ে একটি রুমে আটকে রাখা হয় এবং শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। বুকে টাউট লিখে সুপ্রিম কোর্ট ঘোরানো হয়।
আদুরী আরো বলেন, ওই সময়ে ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম। তারা আমার মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। এরপর আমাকে শাহবাগ থানায় তুলে দেয়। মামলা করে ৪১৯ ধারায়।
ওই নারী আরো বলেন, মামলায় ২১ দিন জেল খেটে গত ৪ জুন তিনি বের হয়েছেন। এবং জেলে থাকায় অবস্থায় তার গর্ভের সন্তানও নষ্ট হয়ে গেছে।
বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে লিখিতভাবে জানালে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন বলে জানান আদুরী।
লিখিত বক্তব্যে আদুরী বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি টাউট ও দালালমুক্ত হোক, সেটা আমিও চাই। তাই বলে টাউট মুক্তের নামে আমার মতো একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী পরিবারের সন্তানের সঙ্গে যেটা করা হয়েছে সেটা শুধু অনাকাঙ্ক্ষিত নয়, অমানবিক। যা সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের কাছে কোনোভাবেই কাম্য নয়।
উল্লেখ্য, বার কাউন্সিলের সনদ নেই এমন ব্যক্তিরাও বিভিন্ন মামলা-মোকদ্দমা নিয়ে আদালতপাড়ায় আসেন, এমনকি মামলার শুনানির জন্য কোর্টে যান। এসব ব্যক্তিকে টাউট-দালাল অভিহিত করে তাদেরকে প্রতিহতের দাবি জানিয়ে আসছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা। সেই দাবির মুখে টাউট-দালাল উচ্ছেদে নামে আইনজীবীরা।
এ অভিযানে ২২ জন টাউট ও দালাল শনাক্ত করেন তারা। তাদের সুপ্রিম কোর্টে অবাঞ্ছিত করার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে থানায় সোপর্দ করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে টাউট-দালাল উচ্ছেদে বর্তমানে একটি কমিটি কাজ করছে।